আমার খুব নিকটাত্মীয় একজন। একসময় বেশ সম্পদশালী ছিলেন। পরবর্তীতে ব্যবসায় লসসহ নানা কারনে এতটাই অর্থসংকটে পড়েন যে, এমনও দিন গিয়েছে যে একদিনের বাজার খরচটা পর্যন্ত তার কাছে থাকতো না। চক্ষু লজ্জার কারনে কারো কাছে চাইতেও পারতেন না, এদিকে অর্থ সংকট দিন দিন আরও ঘণিভুত হচ্ছিল।
তার একটি জমি ছিল। যেই জমিটার বাজার মুল্য বেশ চড়া। কিন্তু গত ৫ বছর যাবত এই জমিটি তিনি বহুবার বিক্রি করতে চেয়েও করতে পারেন নি। নানা ভুয়া দখলদারের ভুয়া কাগজপত্রের জেরে এবং ভিলেজ পলিটিক্সের কারনে বহুবারই ক্রেতা কেনার ওয়াদা করেও ফিরে গিয়েছে। একটা পর্যায়ে তিনি আশাই ছেড়ে দিলেন, এই জমি আর বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
এদিকে লোনের পর লোন করতে করতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা লোন হয়ে গিয়েছিল তার। মাঝে মাঝেই আমাকে বলতেন, আল্লাহ যদি আত্মহত্যা করা জায়েজ রাখতো বহু আগেই আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যেতাম।
এই বছর এপ্রিলের কাহিনী…
সিদ্ধান্ত নিলেন উমরাহ করতে যাবেন। সবাই অবাক। বাজার খরচ নাই, সেখানে উমরাহ করতে চাওয়া তো বিলাসিতা মনে হয় অনেকের কাছে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। তার বড় ভাই থেকে ১ লক্ষ টাকা লোন করে উমরাহর জন্য নাম লেখালেন।
কিন্তু আল্লাহর কী ফায়সালা। তার উমরাহ ভিসা হলো না। প্লেনের টিকেট কেটেছিলেন আগেই। এয়ারপোর্টে লাগেজ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন এই আশায় যে যদি শেষ মুহুর্তে ভিসা আসে। কিন্তু ভিসা আর আসলো না…
একে একে আমরা সবাই প্লেনে উঠে গেলাম। তিনি এয়ারপোর্টের বাইরে ঠায় দাড়িয়ে রইলেন বহুক্ষন।
ক্লান্ত, শ্রান্ত!
একটু ভাবুন তার মনের অবস্থা… ১ লক্ষ টাকা লোন করে যে টিকেট কেটেছিলেন, সেটা ছিল প্রায় নন রিফেন্ডবল। (মানে নানা কাহিনী করে খুব সামান্য টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছিল।)
তার লোনের পরিমান বাড়লো, যাওয়া হলো না উমরাহতেও।
এত বড় পরিক্ষাতে আমি হলে কী করতাম জানি না। কিন্ত তিনি সবর করলেন। কষ্ট ছিল, আফসোস ছিল, কিন্ত সেই সাথে রবের ফায়সালাতে সন্তুষ্টিও ছিল।
মাস দুয়েক আগে! পুনরায় তিনি উমরাহতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কী অদম্য জযবা তার। নানা দিক থেকে আবারও টাকা ম্যানেজ করে উড়াল দিলেন আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে। এবং ১৩ দিনের মুবারক সফর শেষে বাড়ি ফিরে আসলেন।
ইহরামের চাদর গায়ে তার তাওয়াফ, উমরাহ, আল্লাহর কাছে রোনাজারী, এতদিনকার সবর… সব যেন কবুল হয়ে গেলো একসাথেই।..
ফিরে আসার এক মাসের মাথায় তার সেই জমিটির এক চতুর্থাংশ বিক্রি হয়ে গেলো। যেই জমিটি বিক্রির জন্য জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেছিলেন, সেই জমি সেধে এসে কিনে নিলো এক ক্রেতা। এরপর সেই বিক্রির খবর যখন এলাকাতে জানাজানি হলো, আরও একজন ক্রেতা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। অবশেষে মাত্র সপ্তাহখানেকের আলোচনা শেষে আজ রেজিস্ট্রি হয়ে গেলো আরও এক চতুর্থাংশেরও।
অর্ধেক জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে শুনে এখন আর ক্রেতার অভাব হচ্ছে না। জমির ভুয়া দখলদারের কারনে সবাই দোটানার মধ্যে থাকলেও, এখন আর সেই ভয়টা নেই।
যাকাত নেয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি হয়ে গেলেন যাকাত দাতা। এক ঝটকায় ত্রিশ লক্ষ টাকা লোন শোধ হয়ে তিনি আলহামদুলিল্লাহ আজ বেশ বড় ফিগারের অর্থের মালিক।
পৃথিবীর সব মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। আমার আল্লাহর কথা, তার রাসুলের বানীর একটি অক্ষরও তো মিথ্যা হতে পারেনা।
“তোমরা বারবার হজ ও উমরাহ করতে থাক। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে।” – সুনানে নাসায়ী।